আম্মু, আজকে রাতে তুমি আমার সাথে ঘুমাবে
” আম্মু, আজকে রাতে তুমি আমার সাথে ঘুমাবে? ”
” তোর সাথে শুতে হবে ?”
” শোও না, প্লিইইজ” আমি আনুনয় করে বলি।
ব্যাপারটা এমন নয় যে আমি রাতে একা ঘুমাতে পারি না। আমি সেই ক্লাস ফোর থেকেই একা ঘুমাই। তারপরও কয়েকদিন পর পর কেমন যেন লাগে। তাই মাঝেমাঝেই আম্মুকে আমার সাথে ঘুমাতে আসতে হয়। দুইজনে মিলে ফিসফিস করে রাজ্যের গল্প করি। তারপর একসময় আম্মুর শাড়ি ঘেঁষে ঘুমিয়ে পড়ি। আহ, কি শান্তি!
পরীক্ষার সময় তো কথাই নেই। রাতের ভাতটা অবশ্যই আম্মুর হাতে খেতে হবে। কেন যে আম্মুর হাতে ভাত খেলে ভাতের স্বাদ বহুগুন বেড়ে যায় সেটা আমি বলতে পারবো না। আর সকালে আম্মুর কাছ থেকে দোয়া নিতেই হবে। যত যাই হোক, সেদিন আমার জন্য আম্মুকে স্পেশাল দোয়া করতেই হবে।
অন্য কারো হাতে আমি মাথায় তেল দেই না। এই একটা কাজ আম্মুকে করতেই হবে। আমি চেয়ারে বসে থাকবো আর আম্মু মাথায় বিলি কেটে কেটে তেল দিয়ে দিবে। আরামে আমার ঘুম চলে আসবে।
”দুপুরে কি খেয়েছিস?”
” কি আর খাবো? ঐ মোটা চালের ভাত আর মুরগি মাংস।” আমি মুখ ভেংচিয়ে উত্তর দেই।
পরদিন থেকে আমার জন্য লাঞ্চ বক্স রেডি হয়। ভিতরে থাকে ভাজি, মাংস আর ডাল। কি মজা আম্মুর সেই রান্না!
ভার্সিটি থেকে ফিরে আম্মুর সাথে বকবক করতে থাকি।” জানো আম্মু আজকে না কি হয়েছে………… আম্মু সামনের
শনিবার না আমাদের সেমিনার আছে…………উফফ আজকে যা জঘন্য প্রোজেক্ট দিয়েছে না……… আমার আমলা আপু কি বলেছে জানো………… আজকে না আমাদের নতুন ব্যাচ এসেছে………………………” । আমি বলতেই থাকি… বলতেই থাকি। স্কুল, কলেজ সবখানেই একই অবস্থা ছিলো আমার। গাড়িতে উঠেই বকবক করতে থাকতাম, অনর্গল।
বিশ্ব মা দিবস কবে তা আমি ঠিক করে বলতে পারবো না। আম্মুও হয়তো জানে না। কারণ আম্মুর অত সময় নেই। ছেলেমেয়েদের জন্য রান্না করা, মুখে তুলে খাইয়ে দেওয়া, মাথায় তেল দিয়ে দেওয়া, সারাদিনের ঘটনার সারমর্ম শোনা এসব করতে করতে হাতে সময় থাকে কখন? আর সংসারের কাজের কথা তো বাদই দিলাম। আমার সাবেক শিক্ষিকা মা আমার সবচেয়ে বড় সঙ্গী। আমি আম্মুকে ভালোবাসি। এই ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য কোন মা দিবস লাগে না। ছোট্ট এই আমি আম্মুকে কতটা ভালোবাসি তা আমার প্রতিদিনের এসব ছেলেমানুষি কার্যকলাপের মধ্যেই প্রকাশ পায়। আর আমার প্রতি আম্মুর ভালোবাসার কথা তো বললামই না…………………
What did you think of this story??