বিয়ে_মানেই_বৈধ_বেশ্যাবৃত্তি?
বিয়ে_মানেই_বৈধ_বেশ্যাবৃত্তি?
শুনেই গায়ে কাঁটা দিলো? মনে হলো লেখক হয়তো রুচিহীন, নোংরা মানসিকতার, পবিত্র দাম্পত্য সম্পর্কে বিষ ঢালছে?
আপনার সেই ক্ষোভ আমি মাথা পেতে নিলাম। আপনার ঘৃণার আগুনে আমার কলম জ্বলতে রাজি।
কিন্তু, দয়া করে… শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
যদি আপনার বিবাহিত জীবনের বন্ধ দরজার আড়ালের নিরাবরণ সত্যটাকে আমি আয়নার মতো না দেখাতে পারি, তবে আমাকে পাথর ছুঁড়ে মারবেন, আমার লেখা আবর্জনায় ফেলে দেবেন।
তবে হুঁশিয়ারি—এই লেখার প্রতিটি শব্দ আপনাকে মানসিকভাবে আঘাত করতে পারে।
—
অধ্যায় ১ : বিছানার নির্মম মুখোশ
আমরা সবাই এমন এক সমাজে বাস করি, যেখানে বিয়ে মানে হাজার মানুষের সামনে উৎসব—ঢাক-ঢোল, আলো, আতিথেয়তার প্রদর্শনী।
কিন্তু সেই সম্পর্কের সবচেয়ে গোপন, সবচেয়ে গভীর অংশটা যখন আলোচনায় আসে, তখন আমরা হোঁচট খাই। আমাদের গলায় গিঁট পড়ে, চোখে লজ্জার পর্দা নামে। আমরা শুধু বেডরুমের দরজা বাইরে থেকে নয়, ভেতর থেকেও বন্ধ করে দিই। আর সেই বন্ধ দরজার ভেতর জন্ম নেয় এক অদৃশ্য দূরত্ব, বিষাক্ত অতৃপ্তি, আর বিশ্বাসঘাতকতার শেকড়।
প্রশ্ন করি—অনেক দম্পতির কাছে শারীরিক মিলন আসলে কী?
স্বামীর কাছে—
এটা সারাদিনের ক্লান্তির শেষে এক ধরণের “রিলিজ মেকানিজম।”
তার লক্ষ্য শুধু চরমসুখে পৌঁছানো। স্ত্রীর শরীর সেখানে কেবল যন্ত্র, মাধ্যম, দরজা মাত্র।
শেষ হলেই পাশ ফিরে ঘুম।
স্ত্রীর কাছে—
এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্তব্য।
বিয়ের দায়, সংসার টিকিয়ে রাখার নীরব শর্ত। শরীর মেলে ধরলেও মন পড়ে থাকে অন্যত্র—রান্নাঘরের সিঙ্কে, সন্তানের হোমওয়ার্কে, বা কালকের বাজার-হিসাবে।
মুখ বুজে সেরে দেওয়া কাজ, যাকে সে “মেনে নেওয়া” শিখেছে।
তাহলে বলুন, এ কোন সম্পর্ক?
এ কি ভালোবাসা?
নাকি এক অদৃশ্য চুক্তির ভেতর বৈধ পতিতাবৃত্তি?
টাকা নেই ঠিকই, কিন্তু তার বিনিময়ে আছে নিরাপত্তা, সংসার, সামাজিক সম্মান।
শরীর দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু আত্মা অনুপস্থিত।
এই মিলন ক্লান্তি আনে, কিন্তু শান্তি আনে না।
এ মিলন সন্তান জন্ম দেয়, কিন্তু প্রেম জন্ম দেয় না।
যেখানে এক সঙ্গী ব্যবহৃত হওয়ার তিক্ত অনুভূতিতে কুঁকড়ে যায়, আর অন্য সঙ্গী অপরাধবোধে ঘুম হারায়—
সেই বিছানা আর প্রেমের মন্দির নয়, সেটা এক নীরব কসাইখানা।
—
অধ্যায় ২ : শরীর থেকে আত্মায় উত্তরণ
তাহলে কি দাম্পত্যে শরীরী প্রেম অপ্রয়োজনীয়? না।
বরং সেটাই সম্পর্ককে পূর্ণতা দেয়—শর্ত একটাই, সেটা হতে হবে যান্ত্রিক নয়, শৈল্পিক।
প্রেমিক স্বামী
একজন সাধারণ স্বামী নিজের তৃপ্তি খোঁজে, কিন্তু একজন প্রেমিক স্বামী খোঁজে স্ত্রীর তৃপ্তির ভেতর নিজের আনন্দ।
স্ত্রীর শরীরকে সে ভোগের বস্তু নয়, পবিত্র মন্দির ভাবে।
সে জানে আসল খেলাটা শুরু হয় স্পর্শের আগেই—
কানে ফিসফিস করা প্রেমের বাক্যে, চুলে হাত বুলানোয়, কপালে দীর্ঘ চুম্বনে।
সে তাড়াহুড়ো করে না। সে সময় নেয়।
সে জিততে চায় না—সে দুজন মিলে খেলার আনন্দ পেতে চায়।
প্রেমিকা স্ত্রী
অন্যদিকে, প্রেমিকা স্ত্রী জানে—সে শুধু কর্তব্য পালনকারী নয়, সে সমান অংশীদার।
সে বিছানায় শুয়ে থাকা নিথর বস্তু নয়, সে দাউ দাউ করে জ্বলা আগুন।
সে নিজের চাহিদা প্রকাশ করতে লজ্জা পায় না, স্বামীকে পথ দেখাতে ভয় পায় না।
সে শুধু গ্রহণ করে না, সে দিতেও জানে।
তার স্পর্শে থাকে অধিকার, আমন্ত্রণ, কামনা।
সে প্যাসিভ নয়, সে দুর্নিবার।
যখন প্রেমিক স্বামী আর প্রেমিকা স্ত্রী মিলিত হয়, তখন সেটা আর নিছক সেক্স নয়, সেটা হয়ে ওঠে লাভ মেকিং।
দুটি শরীর মিলে যায়, আর দুটি আত্মা উড়ে যায় এক অপার্থিব উল্লাসে।
—
অধ্যায় ৩ : প্রেম বনাম দেহ—আকাঙ্ক্ষার দুই মেরু
নারী প্রেমপিপাসু।
পুরুষ দেহপিপাসু।
এই দুই ক্ষুধার সঠিক সঙ্গমেই টিকে থাকে দাম্পত্যের রসায়ন।
স্ত্রীর প্রেমক্ষুধা—
সে দিনের পর দিন শারীরিক মিলন ছাড়া থাকতে পারে, যদি সে মানসিক আদর পায়।
একটি ফোন করে জিজ্ঞাসা করা, “খেয়েছো তো?”
কোনো কারণ ছাড়াই বলা, “আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
এই ছোট্ট যত্নই তার ক্ষুধা মেটায়।
না হলে সে হয়তো শরীর দেবে, কিন্তু মন দেবে না।
পুরুষের দেহক্ষুধা—
সে শরীর চায় কারণ তার ভালোবাসা তাতেই প্রকাশিত হয়।
স্ত্রী তাকে ফিরিয়ে দিলে, সেটা শুধু শরীর নয়, তার পৌরুষ ও ভালোবাসাকেও প্রত্যাখ্যান করে।
তখন পুরুষ ভেতরে ভেতরে শুকিয়ে যায়।
চক্রটা খুব সহজ—
বুদ্ধিমান স্ত্রী স্বামীর দেহক্ষুধায় সাড়া দেয়, আর বুদ্ধিমান স্বামী স্ত্রীর প্রেমক্ষুধা পূরণ করে।
যতক্ষণ এই চক্র সচল, ততক্ষণ সম্পর্ক জীবন্ত।
—
অধ্যায় ৪ : যে ভুলগুলো ভালোবাসাকে কবর দেয়
১. কথা না বলা
আপনার সঙ্গী মনের কথা পড়তে পারবে না। ইচ্ছা-অনিচ্ছা বলতে হবে। নইলে দূরত্ব বাড়বে।
২. সেক্সকে অস্ত্র বানানো
ঝগড়া হলে শারীরিক সম্পর্ক বন্ধ করে দেওয়া মানে সম্পর্কের কফিনে শেষ পেরেক পোঁতা।
৩. তুলনা করা
সিনেমা বা অন্যের সাথে তুলনা করলে সঙ্গীর আত্মসম্মান ভেঙে যায়। সে প্রতিযোগী নয়, আপনার প্রিয়তম মানুষ।
৪. একঘেয়েমি
যান্ত্রিক পুনরাবৃত্তি সম্পর্ককে নিস্তেজ করে। নতুনত্ব, খেলার আনন্দ, চমক—এসব দরকার।
—
শেষ কথা : আপনার বেডরুম—মন্দির নাকি কসাইখানা?
শারীরিক মিলন কোনো পাপ নয়, কোনো লজ্জার বিষয় নয়, আবার এটা কেবল কর্তব্যও নয়।
এটা হলো ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ শিল্প, একধরনের উপাসনা।
যে স্বামী স্ত্রীর আনন্দকে নিজের আনন্দ বানাতে পারে, সে-ই প্রকৃত রাজা।
যে স্ত্রী নিজের চাহিদাকে সম্মান করে ও প্রেমের খেলায় সঙ্গী হয়, সে-ই রানী।
তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন—
আপনার বিছানা কি কেবল শরীর মেলানোর জায়গা?
নাকি সেটা এমন এক মন্দির, যেখানে দুটি আত্মা প্রেমের মহোৎসবে মিলিত হয়?
উত্তরটা আপনার হৃদয়ের ভেতরেই লুকিয়ে আছে।
Probashi Mon
What did you think of this story??
