নিজের মাকে এগুলো বলে
—–আম্মা,তোমার জামাই রোজ রাতে আমায় খুব ব্যাথা দেয়…!!😲
নিজের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীরে মুখে এমন একটা কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পতিত হলাম আমি।এটা কি বলছে শ্রেষ্ঠা…??🙄
নিজের মাকে এগুলো বলে কেউ,মানুষ বোকা হয়,তাই বলে এতোটা বোকা।শ্রেষ্ঠার সমস্ত বিষয় যেন আমার কল্পনার বাইরে।
বয়স নেহাত খুব একটা কম নয়,বিশ পেরিয়েছে।কিন্তু ওর চেহারা আর ব্যবহার দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই।
শ্রেষ্ঠার সাথে বিয়ে হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ।একটা বাসা বাড়িতে ওকে নিয়ে থাকি আমি।
আমার নাম সৌহার্দ্য।মাকে হারিয়েছি এক বছর আগে।আপন বলতে বাবা আর একটা ছোট ভাই আছে।ওরা অবশ্য শহরের বাইরে থাকে।
আমি শ্রেষ্ঠার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলাম!
—-পাগল হয়ে গেছো নাকি, এগুলো কি বলছো মাকে?
—কেন কি বলছি, যা সত্যি তাই বলেছি।
—তুমি কি কিছুই বোঝা না,মানে এতো ন্যাকামি কোথা থেকে আসে তোমার ..??
—কি আপনি আমায় ন্যাকা বললেন…??
(রেগে দাঁত কটমট করে বলে উঠলো।কথায় আছে না, বোকারা রেগে গেলে ভয়ংকর রুপ ধারণ করে। আমার বৌএর হয়েছে সেই অবস্থা)
—কেন ভুল কিছু বললাম বুঝি,
—অবশ্যই ভুল বলেছেন।
—দেখো শ্রেষ্ঠা।তুমি তো জান আমরা সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী হই।আমাদের ভেতরে যাই হোক না, বিশেষ করে রাতে।সেগুলো একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার।বাবা মাকে কি বলতে আছে!?
—বাহহহ!আপনি আমাকে ব্যাথা দিবেন আর আমি কাউকে বলবো না।
(শ্রেষ্ঠাকে কিকরে বুঝাই ও যেটা বলছে চূড়ান্ত মূখার্মী ছাড়া কিছু নয়।কিন্তু সে বোঝবার পাত্রী নয়,খুব ভালো করেই জানি আমি।ওকে অন্যভাবে শান্ত করতে হবে!)
—আচ্ছা, ঠিক আছে। আর ব্যাথা দেবো না।কথা দিলাম।অনেক অনেক চকলেট দেবো তোমায়। তুমি যা যা খেতে চাও সব কিনে আনবো।
—সত্যি বলছেন….??
(উচ্ছ্বাসের স্বরে )
—হ্যাঁ,সত্যি বলছি।তুমি না চাইলে আমি ছোবোও না তোমায়।শুধু নেক্সট টাইম এই ধরনের উল্টোপাল্টা কথা কারো সাথে বলো না।
—না বলবো না,তবে চকলেট আনতে হবে কিন্তু।
–হ্যাঁ বাবা আনবো।
শ্রেষ্ঠাকে কোনোমতে বুঝিয়ে নিজের অফিসে চলে গেলাম।যতোই শিশুসুলভ হোক না কেন,রান্নাটা মোটামুটি ভালোই করতে পারে শ্রেষ্ঠা।যদিও আমায় প্রচুর সাহায্য করতে হয়। সকাল সকাল রান্নাটা সেরে রেখেছি,তাই বিশেষ কোনো চিন্তা নেই।
–
–
–
–
–
যদিও বাসায় দুপুরের পরে ফেরবার কথা ছিলো, কিন্তু কাজের চাপে বড্ড দেরি করে ফেলেছি।বাসায় ঢুকে দেখি সাতটা বেজে গেছে।চারদিকে কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই।
বেডরুমে গিয়ে দেখলাম শ্রেষ্ঠা অঘোরে ঘুমুচ্ছে।না জানি কখন শুয়ে পড়েছে।ভাবলাম জাগিয়ে তুলবো,পরে নিজের সিধান্ত পরিবর্তন করি।
নিজের জন্য কেনা কতোগুলো গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রাখার জন্য ড্রয়ারটা খুললাম।কিন্তু একি! ড্রয়ারের ভেতরে তিল ঠাঁই পরিমান জায়গা নেই। পুরোটা শ্রেষ্ঠার গয়নাগাটিতে ভরপুর।কতগুলো কাঁচের চুড়ি,নেকলেস,কানের দুল ইত্যাদি ইত্যাদি…..
মেয়েটা আসলেই পাগল,নয়তো এতো অযথা গয়নাগাটি কেউ এভাবে সাথে নিয়ে আসে।ড্রয়ারের ভেতরে হাত দিতেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করলাম আমি।
এক কোনায় একটা কানের দুল পড়ে আছে, খুঁজে দেখলাম এর অন্য পিসটা কোথাও নেই। কানের দুলটা দেখে রীতিমত হাত পা কাঁপতে শুরু করলো আমার!!
দুলটা হাতে নিয়ে দৌড়ে পাশের রুমে ছুটে গেলাম।আলমারিটা খুলে তার ভেতর থেকে একটা বক্স বের করি।বক্সের ভেতরে একটা কানের দুল,এক বছর আগে আমিই এখানে রেখেছিলাম এটা।
দুটো দুল পাশাপাশি রেখে দেখলাম,একদম সেম কালেকশন।সেম ডিজাইন,সবকিছু সেম!!
হায় আল্লাহ!!!এটা কি দেখছি আমি। পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে যেতে লাগলো আমার।
—-আজ থেকে এক বছর আগে আমার মায়ের খুন হয়েছিলো।আর সেই খুনি একটা মেয়ে ছিলো।অন্ধকারে ধস্তাধস্তির সময়ে যার কান থেকে একটা দুল ছিড়ে নিয়েছিলাম আমি।এরপর সেই অজ্ঞাতনামা খুনি আমায় ধোকা দিয়ে পালিয়ে যায়। নিজের মায়ের খুনিকে আর খুঁজে পাইনি আমি।আজ দীর্ঘ এক বছর পরে এ কোন পরীক্ষার মুখোমুখি হলাম আমি,,
এই কানের দুলটা শ্রেষ্ঠার কাছে এলো কিকরে…. তবে কি…..??????
চলবে,,,
#ওগো বধু সুন্দরী#ওগো বধু সুন্দরী
পর্ব—-০২
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
কানের দুলজোড়া হাতে নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লাম।কি করবো বুঝতে পারছি না!হঠাৎ একটা কথা মাথায় এলো আমার।
আজ থেকে দীর্ঘ এক বছর আগে যখন সেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সাথে আমার ধস্তাধস্তি হয়,ওর কান থেকে দুলটা কেড়ে নেবার সময়ে আমার হাতে দুল ছাড়াও আরো একটা জিনিস চলে আসে।সেটা হলো তার রক্ত।তার কানের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো নিশ্চয়ই।আর রক্তের পরিমাণ এতটাই ছিল সেই দাগ এতো তাড়াতাড়ি মুছে যাবার কথা নয়।
শ্রেষ্ঠা যদি সেই ব্যক্তি হয় যাকে আমি ভাবছি, তবে নিশ্চয়ই ওর কানে সেই দাগটা থাকার কথা।শ্রেষ্ঠার সাথে বিয়ে হয়েছে আমার এক সপ্তাহ।কিন্তু ও সেইভাবে আমায় কখনোই ওর কাছে ঘেঁষতে দিতে চায় না।তাই দাগটা থাকলেও চোখ এড়িয়ে গেছে হয়তো।
নাহ!আর সময় নষ্ট করা চলবে না।এখুনি গিয়ে ওর কানের দাগটা পরখ করে দেখতে হবে।এই রহস্যের জট না খোলা পর্যন্ত শান্তি নেই আমার।
এই ভেবে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।
তার আগে কানের দুলজোড়া কাপড়ে পেঁচিয়ে যথাস্থানে রেখে দেই।বেড রুমে ঢুকে দেখি শ্রেষ্ঠা আপন মনে ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করছে।কথায় আছে,ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষকে দেখতে বেশী নিষ্পাপ লাগে।এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে, শ্রেষ্ঠার থেকে নিষ্পাপ মেয়ে এই পৃথিবীতে কোথাও দেখিনি আমি।ওর মুখের দিকে তাকালেই একটা অন্যরকম মমত্ববোধ কাজ করে।আমি কি শুধু শুধুই সন্দেহ করছি ওর ওপর।শুধুমাত্র একটা কানের দুল কিছুতেই উপযুক্ত প্রমাণ হতে পারে না।
নিজের স্ত্রী হিসেবে শ্রেষ্ঠার প্রতি আমার সন্দেহ আরোপ হয়তো অমুলক,কিন্তু আমার মনের দুশ্চিন্তা দূর না হওয়া পর্যন্ত যে শান্তি পাচ্ছি না আমি।শ্রেষ্ঠার প্রতি সন্দেহ থেকে না হোক,নিজেকে অন্তত ভুল প্রমাণ করার জন্য আমাকে ওর কাছে যেতে হবে।ওর কানের ওপরে কোনো দাগ আছে কিনা আবিষ্কার করতে হবে আমায়।
এই ভেবে আমি ধীরে ধীরে বিছানার ওপরে উঠলাম।শ্রেষ্ঠার সামান্য শব্দেই ঘুম ভেঙে যাবার অভ্যাস আছে।তাই যা করার ধীরে সন্তর্পণে করতে হবে।আরো ঘনিষ্ঠ হতেই হঠাৎ শ্রেষ্ঠার ঘুম ভেঙে গেলো!আমি অমনি হকচকিয়ে উঠলাম।নিজেকে বড্ড অপ্রস্তুত মনে হচ্ছে।
—এতোক্ষনে আমায় আদর করার সময় হলো,??(ঘুমমিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো শ্রেষ্ঠা)
শ্রেষ্ঠা আমার সাথে সবসময় একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করে ঠিক,আমায় একটু ভয় ভয় পায়।কিন্তু একটা জিনিস আগেই লক্ষ্য করেছি আমার আদর নেবার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।আমার ব্যহ্যিক স্পর্শ ও বেশ উপভোগ করে।হয়তো শুধু শ্রেষ্ঠা নয়,সব মেয়েদের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে।এই মূহুর্তে শ্রেষ্ঠার সাথে সময় কাটানোর চেয়েও আগে নিজের মনের আশংকা দূর করা অনেক বেশী জরুরী।
শক্ত করে শ্রেষ্ঠাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম,ওর ওর গালে একটা আলতো চুমু বসিয়ে দিলাম।মূহুর্তেই ওর শরীরটা আমার স্পর্শ পেয়ে মোচড় দিয়ে উঠলো।নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ করার জন্য আমার দিকে ফিরলো শ্রেষ্ঠা,ঠিক তখন আমি সুযোগ বুঝে নিজের তীঘ্ন দৃষ্টি ওর কানের ওপরে নিবদ্ধ করি।
মূহুর্তেই সারা শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো আমার।একটা প্রচন্ড শব্দে আঁতকে উঠলাম আমি।চোখের সামনে শ্রেষ্ঠার কানের কাটা দাগটা জ্বলজ্বল করছে।এতোদিন তো খেয়ালই করতে পারি নি এটা।
শ্রেষ্ঠাকে এক ঝটকায় ছেড়ে বিছানার ওপর বসে পড়লাম,,সারা শরীর ঘামতে শুরু করে আমার।
—একি!কি হলো আপনার,আপনি কি ভয় পেয়েছেন,আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?(শ্রেষ্ঠাও উঠে বসে আমাকে প্রশ্ন করে)
—না, না, এটা হতে পারে না।এটা হতে পারে না কিছুতেই!!(কাঁপা গলায় বলতে থাকি আমি)
–আপনার হয়েছে টা কি… এমন কেন করছেন??
–কিছু হয়নি, কিছু হয়নি আমার।
—না, আপনার কিছু তো হয়েছে।এমন করছেন কেন?
—বললাম তো কিছু হয়নি, এক কথা বার বার কেন বলছো?
আমাকে রেগে যেতে দেখে ভয় পেয়ে গেলো শ্রেষ্ঠা।একদিকে আমার প্রতি উদ্বিগ্নতা, আবার আমাকে ভয় পাওয়া,অবুঝ শিশুসুলভ যার প্রত্যেকটা আচরণ..এই শ্রেষ্ঠাকে দেখে আমার আরো বেশী ভয় হতে লাগলো।আমি চোখের সামনে যে শ্রেষ্ঠাকে দেখতে পাচ্ছি,সেদিন মা খুন হওয়ার রাতে কি ওই ছিলো!কিন্তু সেটা কিকরে সম্ভব…??
শ্রেষ্ঠা কি সত্যিই এমন,নাকি এটা ওর একটা মুখোশ।এতোটা ছলনা,কপটতা,মিথ্যাচার কেউ কিকরে করতে পারে.??
নিজের মনের দুশ্চিন্তা দূর করতে গিয়ে সেটাকে যেন নিজেকে অজান্তেই লক্ষ কোটি গুনে বাড়িয়ে দিয়েছি আমি।এ কোন গোলক ধাঁধায় পড়ে গেলাম আমি।কি করে বের হবো এই গোলকধাঁধা থেকে।আমার নিজেরো জানা নেই….!!
পাশ ফিরে দেখি শ্রেষ্ঠা আবার শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।ভাবলাম একবার আব্বার কাছে ফোন দেবো,কিন্তু পরে কিছু একটা ভেবে শুয়ে পড়লাম।যদিও রাতে ঘুম আসবে কিনা জানি না, ভালোয় ভালোয় সকালটা হোক।
–
–
–
–
–
সকালে শ্রেষ্ঠার ডাকেই ঘুম ভাঙলো।আমার জন্য হাত পুড়িয়ে রান্না করেছে ও।যদিও এখন জানি কেন ওকে আর নিজের মন থেকে মেনে নিতে পারছি না।মাঝেমধ্যে ভয় করে ওর দিকে তাকাতে।
যাই হোক খেয়ে দেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলাম।অফিসে একটা জরুরী মিটিং আছে। আজকে ফিরতে হয়তো রাত হবে।যাবার আগে সেটা শ্রেষ্ঠাকে জানিয়ে গেলাম।
–
–
–
–
অফিস থেকে বের হতে হতে রাত আটটা বাজলো।দুপুরে একবারমাত্র কথা হয়েছিলো শ্রেষ্ঠার সাথে,আর একবার আব্বার সাথে।
ড্রাইভ করে বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম।রাস্তায় খুব একটা জ্যাম নেই আজ, তাই নির্বিঘ্নে যেতে পারছি।তাছাড়া আবহাওয়াটাও খুব একটা ভালো নয়। যেকোন সময় বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে।
হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে একটা মহিলা আমার গাড়ির সামনে এসে পড়লো।ভাগ্যিস দেখে ফেলেছিলাম,একটুর জন্য দূর্ঘটনা ঘটে যায়নি।মহিলাটা গাড়ির সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।নড়ছেও না,সরছেও না।হর্ন দিচ্ছি তারপরেও কাছ হলো না।মহিলার এই অপ্রত্যাশিত আচরণে আরো মেজাজ বিগড়ে গেলো আমার।গাড়ি থেকে নেমে পড়ি।
–এই ইউ,প্রবেলেমটা কি শুনি?কানে শুনতে পান না নাকি?
(মহিলা নিজের মুখটা একটা ওড়না দিয়ে ঢেকে রেখেছে,তাই চেহারা বোঝা যাচ্ছে না।)
—কি আজব, শুনতে পাচ্ছেন না নাকি।
(কোনো উত্তর আসলো না)
—এতো মহা মুশকিল,আচ্ছা কে আপনি বলুন তো।কিছু তো বলুন।
(ভদ্রমহিলা আবারো নির্বাক)
—আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন না নাকি,আশ্চর্য!!
আমি ভদ্রমহিলার কাছে যেতেই সে যেন ভয় পেয়ে দৌড় দিলো,অমনি তার ওড়নাটা মুখ থেকে খুলে যায়।
মুহুর্তে অবাক হয়ে গেলাম আমি,শুধু অবাক নয় অনেকটাই ভরকে গেলাম।এতো শ্রেষ্ঠা….!!!
সেই কারনেই হয়তো একটু পরিচিত লাগছিলো। কিন্তু শ্রেষ্ঠা এই রাতের বেলা এভাবে কোথায় যাচ্ছে,এইরকম সেলোয়ার কামিজ পড়ে,তাও নিজের চেহারা লুকিয়ে!??
আমি শ্রেষ্ঠার দিকে ছুটে যেতেই ও দ্রুত একটা ক্যাবে উঠে পড়লো,তারপর বিপরীত দিকে অর্থাৎ আমার অফিসের দিকে চলে যায়।
চোখের সামনে কি ঘটলো কিছুই বুঝতে পারছি না,শ্রেষ্ঠা এইভাবে রাতের বেলা কোথায় যাচ্ছে, আর ও আমাকে দেখে পালিয়ে গেলো কেন?শ্রেষ্ঠা কোথায় গিয়েছে আমি জানি না,কিন্তু আমিও আজ বাসায় গিয়ে বসে থাকবো।ফিরতে তো হবেই ওকে।তারপর দেখি কি উত্তর দেয় ও আমায়।বেশ এরকম বেকায়দায় ফেলা যাবে আজ শ্রেষ্ঠাকে।এই ভেবে দ্রুত ড্রাইভ করে নিজের বাসায় পৌঁছলাম।
মাইন গেট পেরিয়ে দরজার সামনে আসতেই দেখতে পাই ভেতরে থেকে দরজা লক করা।নিশ্চয়ই আব্বা আর ছোট ভাই এসেছে গ্রাম থেকে।ওদের আজকেই আসার কথা ছিলো।ঈষৎ উৎসুক মনে কলিং বেল প্রেস করতে লাগলাম।
একটু পরে ভেতর থেকে দরজাটা খুলতে লাগলো!দেখতে পাচ্ছি আমার সমস্ত ধারনাকে ভুল প্রমাণিত করে শ্রেষ্ঠা সামনে দাঁড়িয়ে আছে!!নতুন শাড়ি, আর গয়নাগাটি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে ও!আমায় দেখে একটা অদ্ভুত হাসি দিলো!
—তুমি এসে গেছো,,,তাড়াতাড়ি ভেতরে এসে রেডি হও।।
শ্রেষ্ঠাকে এই সময়ে বাড়িতে তার ওপর এই বেশে দেখে যেন মাথায় বজ্রপাত হলো আমার।মনে হচ্ছে,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখছি আমি….!!!
এটা যদি শ্রেষ্ঠা হয়ে থাকে,তাহলে রাস্তায় কাকে দেখলাম আমি…??
চলবে,, ওগো-বধু_সুন্দরী
পর্ব—-০৩
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
শ্রেষ্ঠাকে এই সময়ে বাড়িতে তার ওপর এই বেশে দেখে যেন মাথায় বজ্রপাত হলো আমার।মনে হচ্ছে,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখছি আমি….!!!
এটা যদি শ্রেষ্ঠা হয়ে থাকে,তাহলে রাস্তায় কাকে দেখলাম আমি…??
—একি…. তুমি এখানে….??তুমি কি করছো এখন এখানে??(আমি ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করি শ্রেষ্ঠাকে)
—আমি এখানে মানে..আপনি কি বলছেন এসব,আমি আমার বাড়িতে থাকবো না কোথায় থাকবো!
—নাহ!এ সম্ভব নয়,কিছুতেই সম্ভব নয় এটা?
—কি সম্ভব নয়,দেখুন আপনি কি বলছেন কিছুই বুঝতে পারছি না আমি!
—তার মানে,তুমি কোথাও যাওনি!
—নাহ!
—কিন্তু আমি যে তোমায় এইমাত্র……
বলেই থেমে গেলাম আমি।নাহ!থাক আর কিছু বলা যাবে না এই মূহুর্তে।শ্রেষ্ঠা নিজেও অবাক হয়ে যাচ্ছে আমাকে বিচলিত অবস্থায় দেখে।
—আচ্ছা,আপনার কি কিছু হয়েছে,এমন করছেন কেন?
—নাহ!আমি ঠিক আছি। আমার কথা ছাড়ো।কিন্তু তুমি এভাবে সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছো?
—আর কোথায় যাবো,আজ রাতে ভাবলাম আপনার সাথে একটু বেরোবে,কিন্তু এখন আপনাকে যেরকম দেখছি…. না থাক আরেকদিন যাবো।
শ্রেষ্ঠার সাথে বাসার ভেতরে ঢুকলাম আমি।ওর সমস্ত ব্যবহার,আচরণ রীতিমত অবাক করে দিচ্ছে আমায়।রাস্তায় যে মেয়েটার সাথে দেখা হলো তার কথা মাথা থেকে সরাতে পারছি না কিছুতেই।মেয়েটা এভাবে আমার সামনে কেন এসে পড়লো,কি উদ্দেশ্য ছিলো ওর।কিছুই জানি না আমি,শুধু এইটুকু জানি আমার রহস্যের জট খুলতে তাকে ভীষণ দরকার আমার।
ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে বসে কথাগুলো ভাবছিলাম।হঠাৎ একটা চায়ের কাপ এগিয়ে আসলো আমার দিকে।আমি এলাচ দেয়া চা পছন্দের করি,শ্রেষ্ঠা তাই এলাচ চা তৈরী করে এনেছে আমার জন্য।ও আবার দুধ চা ছাড়া কোনো চা খায় না।আমার সামনে অন্য একটা সোফায় বসে চায়ের কাপটা মুখে নিলো শ্রেষ্ঠা।
ঠিক তখন আমি একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেই ওর দিকে
—–আচ্ছা, আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে শ্রেষ্ঠা?
—হ্যাঁ,বলুন।
—তুমি কিছু মনে করবে না তো?
—না,মনে করবো না?(চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে)
—আচ্ছা,তোমার কানের ওপরে ঐ কাটার দাগটা কিসের?
আমার কথাটা শোনামাত্রই যেন অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো শ্রেষ্ঠা।চা আটকে যায় ওর গলায়।কেশে পুরো একাকার করে ফেলছে।আমি চায়ের কাপটা রেখে ছুটে ওর কাছে গেলাম।
—একি,কি হলো তোমার??
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি শ্রেষ্ঠা আমার করা প্রশ্নে ভয় পেয়ে গিয়েছে,কোনোভাবে সেটা এড়িয়ে যেতে চাইছে ও!
এক গ্লাস জল দিয়ে ওর কাশিটা থামালাম,এখন অনেকটাই স্বাভাবিক লাগছে।কিন্তু আমিও ছেড়ে দেবার পাত্র নই।ওর সামনে আবারো সেই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করি।
—কি হলো, বললে না তো দাগটা কিকরে এলো!?
—আমি জানি না,কিছু জানি না আমি।
—জানো না,জানো না মানে কি??
—না,মানে মনে নেই আমার!(দায়সারা উত্তর)
—কি বলো,তুমি এতো বড়ো একটা আঘাত পেলে,আর সেটা তোমার কিনা মনে নেই,অদ্ভুদ!
—বললাম না মনে নেই, তারপরেও কেন একই প্রশ্ন করছেন!(বেশ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো শ্রেষ্ঠা।)
তারপর উঠে উপরে রুমের দিকে চলে যায়,আমি ওর চলে যাবার দিকে তাকিয়ে আছি।কি আশ্চর্য!একটা সামান্য প্রশ্ন করাতে এইভাবে রিয়্যাক্ট কেন করলো জানি না।ও নিশ্চয়ই কিছু একটা লুকোচ্ছে আমার থেকে।যা আমি জানি না!
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো!ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসি আমি।স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই দেখি বাবার ফোন কল।
—-হ্যালো,কেমন আছো বাবা?
—আমি তো ভালোই আছি,তোরা কেমন আছিস বল?
—হ্যাঁ,আমরা সবাই ভালো আছি।আচ্ছা মিছিল কেমন আছে?(আমার ছোট ভাইয়ের নাম মিছিল)
—ও ভালো আছে,শোন একটা কথা।
—হ্যাঁ,বলো।
—আমরা কাল শহরে আসছি।আমার সাথে মিছিলও আসবে।তোদের কোনো সমস্যা হবে না তো?
—সমস্যা হবে মানে…যে কি বলো না।তুমি যখন খুশি, যাকে খুশি নিয়ে এসো আমার বাসায়।
—আচ্ছা, ঠিক আছে। আর তুই কিছু মনে করিস না।ওটা তো এমনি মজা করে বললাম।
–হুমম, তোমরা যতোদ্রুত সম্ভব চলে আসো!তোমাদের পেলে শ্রেষ্ঠাও খুশি হবে।
বাবার সাথে কথা বলে বেশ ভালোই লাগলো।বাবা আর ভাই আসছে অনেকদিন পরে।অবশ্য বিয়েটা আমাদের গ্রামের বাড়িতে বসেই হয়েছিলো।আমাদের বাসায় এই প্রথম আসছে ওরা।এটা ভেবে বেশী খুশি লাগছে।
কিন্তু সমস্ত ভালোলাগার ভেতরেও যখন শ্রেষ্ঠা আর রাস্তায় দেখা হওয়া সেই মহিলার কথা মনে পড়ে সকল আনন্দ,ভালোলাগা নিমেষে বিষাদ আর দুশ্চিন্তায় পরিণত হয়।আমি নিজেও জানি না এই ভয়ংকর দুশ্চিন্তা থেকে কবে বের হতে পারবো।তবে যতোদ্রুত সম্ভব আমাকে এই দুশ্চিন্তা থেকে বের হতেই হবে।কোনো মানুষের পক্ষে এতো টেনশন বয়ে বেড়ানো সম্ভব নয়, বিশেষ করে আমার পক্ষে।
–
–
–
–
–
পরের দিন বিকেল বেলায় বাসায় বাবা আর ছোট ভাই চলে আসে।ওরা আসাতে শ্রেষ্ঠাও বেশ আনন্দিত।আমারো ওদের পেয়ে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তার রাশটা লাঘব হলো।অবশ্য আমি বাবার সাথে শ্রেষ্ঠা আর সেই মহিলার বিষয়ে আলোচনা করি,বাবা শুনে আমায় ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিলেন।তবে উনি নিজেও খানিটা চিন্তিত হয়ে পড়েন এই নিয়ে।
–
–
–
এরপর যখন সন্ধ্যা প্রায় সাতটা।ছাদে একা একা পায়চারি করছি আমি।একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো আমার কাছে।আমি রিসিভ করতেই একটা মহিলা কন্ঠস্বর ভেসে আসলো ওপাশ থেকে।
—আপনি মিস্টার সৌহার্দ্য জামান?
—হ্যাঁ, আমি সৌহার্দ্য!বলুন,,
—আপনার জন্য একটা খাস খবর আছে।
—খবর,কিসের খবর।আর আপনি কে?
—আমার পরিচয় পরে দিচ্ছি।আগে একটা লোকেশন দিচ্ছি ওখানে চলে আসুন।
—-লোকেশন,কিসের লোকেশন?
—আজ থেকে এক বছর আগে আপনার মা মারা গিয়েছিলো না,মানে আপনারা যতোদূর জানেন।
—হ্যাঁ,খুনি মাকে মেরে লাশটা নদীতে ফেলে দেয়া দিয়েছিলো।তারপর একপর্যায়ে পুলিশ তাকে আর খুঁজে না পেয়ে মৃত ঘোষণা করে দেন।কিন্তু কি হয়েছে, বলুন তো?
—ঠিক, আপনার মাকে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিলো,কিন্তু উনি সেদিন মারা যান নি।উনি এখনো বেঁচে আছেন?
—হোয়াট, কি বলছেন আপনি এটা??
(লোকটার কথা কিছুতেই নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছি না আমি!)
—দেখুন,দীর্ঘ এক বছর পরে কোমা থেকে ফিরলেন উনি!তারপর ওনার মুখ থেকে আপনাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেলাম।আর হ্যাঁ, উনি এটাও জানেন,কে তাকে খুন করার চেষ্টা করেছিলাম এবং কেন?সবটা মনে করতে পেরেছেন উনি।
মহিলার কথা শুনে যেন,হাত থেকে ফোনটা মেঝেতে পড়ে গেলো আমার।যেন একটা প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো শরীরটা!মা কি সত্যিই বেঁচে আছে,আর সেটা কিনা এতোগুলো দিন পরে জানতে পারছি আমি..,,নাকি আমাকে ফাঁদে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে কেউ??এই মূহুর্তে কি করা উচিত আমার?
ওগো-বধু_সুন্দরী
পর্ব—-০৪
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
মহিলার কথা শুনে যেন,হাত থেকে ফোনটা মেঝেতে পড়ে গেলো আমার।যেন একটা প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো শরীরটা!মা কি সত্যিই বেঁচে আছে,আর সেটা কিনা এতোগুলো দিন পরে জানতে পারছি আমি..,,নাকি আমাকে ফাঁদে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে কেউ??এই মূহুর্তে কি করা উচিত আমার?
নাহ!এই বিষয়ে আগে বাবার সাথে কথা বলতে হবে।তারপর যা করার করবো!ফোনটা রেখে ড্রয়িং রুমের দিকে ছুটে গেলাম আমি।
আমার মুখ থেকে সবটা শুনে অবাক হয়ে গেলো বাবা।
—কি বলিস কি…. তোর মা বেঁচে আছে।কিন্তু কিকরে সম্ভব হলো সেটা?
—হ্যাঁ,বাবা।আমিও তো অবাক হলাম এটা শুনে।প্রথমে তো বিশ্বাসই করতে পারি নি।
—আচ্ছা,ফোন যে করেছিলো,তার কোনো পরিচয় জানতে পেরেছিস কি?
—নাহ!উনি তো নিজের বিষয়ে কিছুই বললেন না আমায়।
—কিন্তু জায়গাটা কোথায়,কোন জায়গা থেকে ফোনকলটা এসেছিলো?
—উনি লোকেশনটা পাঠিয়ে দিয়েছেন আমায়।খুব একটা দূরেও নয় এখান থেকে।এই ধরো যেতে এক ঘন্টার মতো সময় লাগবে।
—আমাদের কি পুলিশের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করা উচিত?
—আমিও একই কথা ভাবছি।আমরা পুলিশকেই বরং আগে জানাই।একটা উড়ো কলের ওপর পুরোপুরি বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।
—একদম ঠিক বলেছিস,কিন্তু আমার কি মনে হয় জানিস,
—কি?
—আমার মনে হয়,কেউ মিথ্যে বলছে না আমাদের। আর দেখ তোর মাকে নিয়ে কেউ কেন এমন একটা মিথ্যাচার কেন করবে আমাদের সাথে। কি লাভ তাদের?
—সেটাও ঠিক।তাহলে কি করা উচিত আমাদের?
—চল,আমরা বরং বেরিয়ে পড়ি।সেইরকম পরিস্থিতি হলে আমরা ওখান থেকেই পুলিশকে ইনফর্ম করতে পারবো।
—তাহলে এখন কাউকে কিছু জানাবো না?
—না থাক,,,
—ঠিক আছে, তুমি যেটা ভালো মনে করো।
বাবার সাথে কথা সেরে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম।ঠিক তখন দেখতে পাই,শ্রেষ্ঠা দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।তার মানে ও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা শুনেছিলো এতোক্ষন।
—একি,তুমি এখানে?
—আপনারা কি আলোচনা করছিলেন দুজন মিলে,?
—কেন, তুমি কিছু শুনতে পাও নি।
—নাহ!আমি তো এইমাত্র এলাম।
—আমাদের মা,সবার জানামতে এক বছর আগে যার খুন হয়েছিলো।আজকে হঠাৎ করেই কেউ ফোন করে আমাদের ইনফর্ম করলো মা মারা যায়নি,এখনো বেঁচে আছে সে।
—কি বলছেন আপনি এটা,তবে এতোগুলো দিন কোথায় ছিলেন উনি?
(আমি লক্ষ্য করছি,শ্রেষ্ঠার মুখমন্ডল জুড়ে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট, এমন মনে হচ্ছে মা ফিরে আসার খবর শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছে ও)
—এতোগুলো দিন নাকি মা কোমায় ছিলো,আজকেই জ্ঞান ফিরেছে তার।
—তো এখন কি করবেন আপনি?
—কি আর করবো,আমি আর বাবা মায়ের কাছেই যাচ্ছি, তাকে ফিরিয়ে আনতে।
—নাহ!যাবেন না। যাবেন না আপনি!!
(এই বলে যেন আঁতকে উঠলো শ্রেষ্ঠা)
—যাবোনা,কিন্তু কেন?আর তুমি আমাকে নিষেধ করছো কেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
—নাহ!কিছু না।
—ভারী অদ্ভুত তুমি,এতোদিন বাদে মাকে ফিরে পেয়েছি আমরা। সেটা জেনেও কিনা হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকবো।এটা হয় কখনো।
শ্রেষ্ঠা আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো।আমি অবাক হচ্ছি ওর এই আচরণে,এমন মনে হচ্ছে শ্রেষ্ঠা কিছুতেই চাইছে না মা বাড়িতে ফিরে আসুক।একটা ভয় বাসা বেঁধে আছে ওর মনে।
মা আসাতে হয়তো রহস্যের জট অনেকটাই খুলবে,আর সেদিন রাতের সেই অজ্ঞাতনামা নারীকে খুঁজে বের করতে পারবো আমি।তাই মায়ের ফিরে আসাটা যেমন আমাদের পরিবারের জন্য মঙ্গল ততটা আমার জন্যও।নয়তো এভাবে মনের ভেতরে একটা সন্দেহর বীজ বপন করে,শ্রেষ্ঠার সাথে সংসার করাটা অসম্ভব হয়ে পড়বে আমার জন্য।
–
–
–
রাত আটটার দিকে আমি আর বাবা বেরিয়ে পড়লাম।ঐ মহিলা যে লোকেশনের কথা বলছে কাজেরসূত্রে কয়েকবার সেখানে যাওয়া হয়েছে আমার।তাই পথ চিনতে খুব একটা অসুবিধে হলো না।রাস্তায় জ্যাম থাকার কারনে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছতে একটু দেরি হলো।
—এইতো,এইজায়গাটা,এখান থেকে ভেতরে যেতে হবে আমাদের??
(আমি বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললাম)
—-আচ্ছা, একটা কাজ কর। তুই ভেতরে গিয়ে আমাকে ফোন করে কনফার্ম কর,যদি উল্টোপাল্টা কিছু দেখিস তবেও জানাবি। আমি পুলিশকে ইনফর্ম করবো।
—কিন্তু বাবা আমরা তো এখনও জানাতে পারি পুলিশকে,,
—দেখ সৌহার্দ্য, তোর মা এতোদিন পরে সুস্থ হয়ে ফিরছে। আমি চাই না পুলিশ তাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করুক।সেটা ওর জন্য ভালো হবে না।
—আচ্ছা বুঝতে পেরেছি,আমি তাহলে ভেতরেই যাচ্ছি।
বাবাকে রেখে ভেতরের দিকে পা বাড়ালাম আমি।একটা পুরনো গোডাউন এর ভেতরে ঢুকলাম আমি।কিন্তু মা এটার ভেতরে কেন, মাথায় ঢুকছে না আমার!হিসেব অনুসারে তার হাসপাতালে থাকার কথা।না জানি ঐ মহিলা ঠিক কি চাইছে?
আমি ধীরে ধীরে পা বাড়াতে লাগলাম,বেশ সুনসান একটা জায়গা।একটু ভয় ভয়ও লাগছে।মাঝে মাঝে এমন মনে হচ্ছে কেউ একটা ফলো করছে আমায় পেছন থেকে,কিন্তু পেছনে ঘুরতেই কেবল অন্ধকার আর শুন্যতা ছাড়া কিছুই দেখতে পেলাম না।যাই হোক,গা ছমছমে পরিবেশের ভেতরে দিয়ে সামনের দিকে যেতে লাগলাম।
হঠাৎ বুঝতে পারলাম কেউ একটা ছুটে আসছে আমার দিকে,সে আমাকে পেছনে ফেরার সুযোগ না দিয়েই মাথায় সজোরে আঘাত করলো।আঁতকে উঠলাম আমি,মাথাটা চেপে ধরে মাটিতে বসে পড়লাম।চারপাশটা ক্রমশ অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো,,বুঝতে পারলাম জ্ঞান হারাচ্ছি আমি, অথবা মারা যাচ্ছি। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে চোখ মেলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই।
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কোনক্রমে ওপরের দিকে একটা চোখ মেলে তাকালাম তারপর যা দেখতে পাই আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি নি কোনোদিন,,
দেখতে পেলাম বাবা হাতে একটা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন!!!!তার সেই লাঠিতে আমার রক্ত লেগে আছে।উনি হয়তো ভাবছেন আমি জ্ঞান হারিয়েছি,তাই দেখতে পাই নি তাকে….
–
–
–
চলবে,,,
( টুইস্ট কেমন লাগলো কমেন্ট বক্সে মতামত প্রকাশ করুন সবাই।)
চলবে,,,
(সামনে আরো অনেক বড়ো টুইস্ট অপেক্ষা করছে সবার জন্য,সাথেই থাকুন।ধন্যবাদ😊)
👉 “গল্পটা মিস করতে না চাইলে এখনই আমাদের নতুন পেজ Feelings Dairy ফলো করে রাখুন।
কারণ প্রতিদিন থাকছে নতুন নতুন গল্প, যা ছুঁয়ে যাবে আপনার মন। ❤️”
What did you think of this story??